BUET Photoshoot
ক্যাম্পাস

অক্টোবর, ২০২০

অতীতে ফিরে যাওয়ার সুযোগ থাকলে বোধহয় ২০১৫-১৬ সালের দিকে একবার ফিরে যেতাম। Amit মামার আউলা ২৫৪ এর সাদামাটা দিনগুলো ফিরে পেতে মাঝে মাঝে ভীষণ ইচ্ছা করে। Avijit সাড়ে সাতটা বাজলেই ঘ্যানঘ্যান শুরু করতো টিউশনি আছে বাসায় যেতে হবে বলে। মামা গীটারে টুংটাং আওয়াজ তুলতো। Kallyan মাঝে মাঝে মোটিভেশনাল সং হিসেবে Inna র গান ছাড়তো। সিটির পড়া, কুইজের পড়া, প্রজেক্ট বা এসাইনমেন্ট করে উড়িয়ে দেবার প্ল্যান করে এসে শেষমেষ রাত দশটা সাড়ে দশটা পর্যন্ত আড্ডা, FRIENDS দেখা আর ফেসবুকে অমিত মামার ফ্রেন্ডলিস্টের মেয়েদের সাথে মামার রিলেশন স্যাবোটাজ করার কাজই করতাম আমরা। এরপর বাইরে থেকে কাচ্চি মেরে এসে আবার চলতো আমাদের কুকর্ম। আবার হঠাৎ কাজের মেজাজ চলে আসলে টানা কাজ করে কিছু একটা দাঁড়া করিয়ে ফেলতাম সবাই মিলে। কেউ সার্কিটের কাজ করছে তো কেউ কোডিং করছে। কেউ চোখের পলকে দুর্বোধ্য কোন সমস্যার অকল্পনীয় সহজ কোন সমাধান নিয়ে আসছে। আরেকদিকে রাত যতই বাড়তো অমিত মামার মুখ থেকেই দুর্বোধ্য ব্যাখ্যাতীত শব্দ আসা শুরু করতো যার ব্যাখা একমাত্র রাসেল ভাই-ই দিতে পারবেন।

গভীর রাতে কখনো হাঁটতে বের হতাম। চলতো গভীর জীবনমুখী আলোচনা। কন্সার্ট দেখে কিংবা বাংলাদেশের খেলা দেখে বের হয়ে হাঁটতাম ক্যাম্পাসে, বেশিরভাগ সময়েই সংগী ছিল অমিত কখনো কেকে আর অভিজিত। হেঁটে হেঁটে ক্যাফেটেরিয়া ছাড়িয়ে সিভিল বিল্ডিং আর EME বিল্ডিং এর মাঝের পায়ে চলা পথ পেরিয়ে রেজিস্ট্রার বিল্ডিং, মেশিন শপ, OAB ছাড়িয়ে বাস ছাড়ার জায়গা, সেখান থেকে আর্কির সামনে, আবার ক্যাফেটেরিয়া আবার শহীদ মিনার, পলাশী, আউলা। কত একা দীর্ঘ রাত আমরা হেঁটে গেছি শুধু। গল্প আমাদের তবু ফুরোত না। কখনো ফুরোবে না।

এখনো ক্যাম্পাসে হাঁটি। একা একাই হাঁটি আর অনুপস্থিত অশরীরি বন্ধুদের কল্পনা করে নিয়েই গল্প জমাই। একসময় নিজেই অশরীরি অবয়ব হয়ে যাই, আরব্য রজনীর এক হাজার এক রাত্রির গল্পের আসর জমাই নিজের সাথেই। হাজার মাইল দূরে থাকা বন্ধুরা আলাপ জুড়ে দেয় কল্পনায়। আর আমি কেবল দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি পুরানো দিনগুলোর আক্ষেপে।

একদিন ক্যাম্পাসটাও অশরীরী হয়ে উঠবে। তখন বহু দূর থেকে হয়তোবা ভার্চুয়াল দুনিয়ার পাতায় দেখবো জীবন তার সব রঙ নিয়ে বর্ণিল হয়ে উঠেছে এখানে। এই রঙ একটা সময়ে আমাদের ছিলো, তখন ভিন্ন কিছু মুখজুড়ে সেই রঙের আঁকিবুকি দেখবো কেবল। কতরাত ফোনে পূর্ণতা ছেড়ে দিয়ে হারিয়ে যেতাম ক্যাম্পাসের পথে, আজকে শুনি আনন্দধ্বনি, পৃথিবী ভরেছে সুখের বেঁচে থাকার মায়ায়।

বেঁচে থাকার মায়া বড় সুন্দর। কিছু স্মৃতির জন্য মায়া জন্মে যায়, সেই মায়ায় কেবল বাঁচতে ইচ্ছে করে।